জাতীয় নির্বাচন, জেলা ও উপজেলা পরিষদ, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন, ব্যবসায়ী সমিতির নির্বাচনসহ বিভিন্ন সংগঠনের নির্বাচনের সঙ্গে দেশের মানুষ বেশ পরিচিত। তবে কবরস্থান বা মসজিদ কমিটি নিয়ে নির্বাচন কোনো সময় দেখেননি।
শনিবার (২৪ মে) পাবনার চাটমোহরে স্থানীয় একটি কবরস্থান কমিটির সভাপতি পদ নিয়ে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এ নির্বাচনকে সামনে রেখে গঠন হয়েছে নির্বাচন কমিশন। ঘোষণা করা হয়েছে তফসিল। দুজন প্রার্থী মনোনয়ন কেনার পর তা দাখিল করেছেন। ইতোমধ্যে দেওয়া হয়েছে প্রতীক বরাদ্দ। বিষয়টি উপজেলাজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার মূলগ্রাম ইউনিয়নে বালুদিয়ার, মহরমখালী ও জগতলা (আংশিক) তিন গ্রামের সমাজ নিয়ে গঠিত ‘জান্নাতুল বাকি’ কবরস্থান। আগের কবরস্থান কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর স্থানীয়ভাবে সভাপতিসহ কমিটি গঠনের জন্য তোড়জোড় শুরু হয়। কিন্তু সভাপতি কে হবেন? এমন বিষয় নিয়ে দুইটি পক্ষের মধ্যে তৈরি হয় উত্তেজনা। পরে বিষয়টি থানা পর্যন্ত গড়ায়। স্থানীয়রা দাবি জানান, ভোটের মাধ্যমে সভাপতি নির্বাচন করা হোক।
এদিকে আব্দুল মতিন মাস্টার নামে কবরস্থান কমিটির বর্তমান সাধারণ সম্পাদককে প্রধান করে ৭ সদস্য বিশিষ্ট নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে। এরপর ঘোষণা করা হয় তফসিল। বালুদিয়ার, মহরমখালী ও জগতলা (আংশিক) তিন গ্রামের প্রতিটি পরিবার থেকে একজন পুরুষকে ভোটার করে ইতোমধ্যে ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। মোট ৮০০ জন ভোটার গোপন ব্যালটে ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে আগামী তিন বছরের জন্য গোরস্থান কমিটির ‘সভাপতি’ নির্বাচন করবেন বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।
শনিবার সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত কবরস্থান সংলগ্ন ঈদগাহ ময়দানে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এদিকে জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচনের মতোই এ নির্বাচন এলাকায় উৎসাহের আমেজ সৃষ্টি করেছে। চলছে প্রার্থীদের আপ্যায়ন।
নির্বাচন কমিশন প্রধান ও কবরস্থান কমিটির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মতিন মাস্টার জানান, জান্নাতুল বাকি কবরস্থান পরিচালনা কমিটি গঠনে ‘সভাপতি’ পদ নিয়ে গ্রুপিং সৃষ্টি হয়। বেশ কয়েকজন সভাপতি হতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন এবং প্রকাশ্য দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন। এমন পরিস্থিতিতে আমরা চাটমোহর থানার ওসির শরণাপন্ন হই। তিনি নির্বাচনের পরামর্শ দেন। অতঃপর আমাকে নির্বাচন কমিশন প্রধান করে ৭ সদস্যবিশিষ্ট নির্বাচন কমিটি গঠন করা হয়।
তিনি আরও জানান, নির্বাচনী তফসিল ঘোঘণা করার পর সভাপতি পদের জন্য ৩০ হাজার টাকা জমা দিয়ে দুইজন প্রার্থী মনোনয়নপত্র কিনে তা দাখিলও করেছেন। বাছাই শেষে তাদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। প্রার্থী দুজন হলেন আব্দুল কুদ্দুস (ছাতা) এবং শরিফুল ইসলাম (চেয়ার)। মনোনয়নপত্র বিক্রি বাবদ প্রাপ্ত ৬০ হাজার টাকায় নির্বাচন পরিচালনা করা হবে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে চাটমোহর থানার ওসি মঞ্জুরুল আলম জানান, কবরস্থানের সভাপতি নির্বাচন করা নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্ব হয়। পরে পূর্বের কমিটি বিষয়টি আমাকে জানায়। তবে এখনো দুপক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে বলে জেনেছি। ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানান ওসি।